শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪০ পূর্বাহ্ন

শুরু হল ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি

বর্তমান সংবাদ ডেস্ক : / ২৬০ বার পঠিত
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ৯:০৪ অপরাহ্ণ
ছবিঃ সংগৃহীত

আহমদ মাজহারুল হক : মাসটি আসলেই মনে পড়ে যায় কত ত্যাগ, তিতিক্ষা কিন্তু বাংলা ভাষার মুক্তির চাওয়াটি এতো সহজ ছিলো না তখন। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমার মায়ের ভাষা বাংলা ভাষা।

যেকোন ভাষা যেকোন জাতির নিজস্ব অহংকার। প্রতিদিনের চর্চায় যা আরও মহীয়ান হয়ে ওঠে। আবহমান বাংলার চিরায়ত সম্পদ তার সমৃদ্ধ মাতৃভাষা। যুগ থেকে যুগান্তরের নানামাত্রিক সাংস্কৃতিক বোধে ভাষা নিজস্ব দ্যোতনায় জনগোষ্ঠীর জীবন ও মননে স্থায়ীভাবে আসন গড়ে তোলে।

বৈশ্বিক সম্পদ আর অফুরন্ত প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে চিরায়ত বাংলা ছিল এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। অবিভক্ত ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেকটাই অগ্রগামী সমৃদ্ধ বাংলা ভিনদেশী পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ, স্বদেশী কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্টি দ্যোতনার অনুষঙ্গ হয়েছে। নজরুল, রবি ঠাকুর লালনের মত জ্ঞানী গুনীর ভাষাও ছিলো বাংলা। বাংলা সে তো মায়ের ভাষা।

বাঙালী জাতি যখন ’৪৭-এর দেশ বিভাগকে কোনভাবে মেনে নেয়, সেখানে তার সাংস্কৃতিক বোধগুলো চিরস্থায়ী মর্যাদায় অটুট ছিল। ১৯০৫ সালের বঙ্গ ব্যবচ্ছেদ এবং ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ কোনটাই চেতনাসমৃদ্ধ বাঙালীর জন্য কাঙ্খিত ছিল না। সেটা প্রমাণিত হতেও খুব বেশি সময় লাগেনি।

রাজধানী ঢাকায়  ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এ নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির তার চরম প্রকাশ পায়।

ঐদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে  শহীদ হন ররকত, জাব্বার, রফিক, সালাম আরো কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন। ফলে রাজপথ উত্তাল হয়ে পরে। দাবী একটাই আমার ভাষা বাংলা। কবিরা লিখে ছিলো, ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়। সাংবাদিক গাফার চৌধুরী লিখেছিলেন। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।

গানে, কবিতায় আরো উত্তাল হয় দেশ। ফলে ওই নিমর্ম হত্যার ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল হোস্টেলের সামনে সমাবেত হন। নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। ভাষা শহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়।

একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু ততদিনে এই জাতি বুঝে যায় স্বাধীনতার মর্ম। যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর মাধ্যমে একটি দেশের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ। আর বাংলা হলো রাষ্ট্রভাষা।

১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘বাংলা ভাষা প্রচলন বিল’ পাশ হয়। যা কার্যকর হয় ৮ মার্চ ১৯৮৭ সাল থেকে। এরপর ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত  ইউনেস্কোর প্যারিস  অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় । ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।

পৃথিবীর নানা দেশে বাংলা ভাষা ও ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদেরকে মনে করে শহীদ মিনার বানানো হয়েছে। লন্ডন, কানাডা, জাপান সহ আরো অনেকগুলি দেশে শহীদ মিনার এর কাজ চলছে। ভাষার মাসে সকল ভাষা সৈনিকদের জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

দিনকে দিন বাংলা ভাষা পৌছে যাক দূর থেকে বহু দূরের দেশগুলিতে। অমর হোক বাংলা ভাষা।

লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Facebook Comments Box


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর