মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

বাউফলে প্রাণি সম্পদ দপ্তরে জনবল সংকট ; ব্যাহত হচ্ছে সেবা

বর্তমান সংবাদ ডেস্ক : / ১৯৭ বার পঠিত
প্রকাশের সময় : সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩, ৭:০২ অপরাহ্ণ

 

বাউফল (পটুয়াখালী) থেকে সংবাদদাতা : ৪শ’ ৮৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের উপজেলা পটুয়াখালীর বাউফল। উপকূলীয় এ উপজেলা রয়েছে পনেরটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। যার মধ্যে রয়েছে ছোট-বড় ২০টি চর।

এখানকার অধিকাংশ মানুষের পেশা কৃষি হওয়ায় প্রায় বাড়িতে রয়েছে গৃহপালিত প্রাণি। যার কারণে এ অঞ্চলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। তবে জনবল সংকট থাকায় কাঙ্খিত প্রাণি সেবা দিতে ব্যর্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। সরকারি সেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।

উপজেলা প্রাণিসম্পাদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ২৬৪টি গরুর খামার, ৯৭টি মহিষ, ১৪২টি ছাগল ও ২৩টি ভেড়ার খামার রয়েছে। হাঁস মুরগী ও কবুতরের খামার রয়েছে ৪ শতাধিক। গ্রামঞ্চলের প্রায় বাড়িতে রয়েছে গৃহপালিত প্রাণি।

কিন্তু ১১টি পদের বিপরীতে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা, দুই জন উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও একজন পিয়নসহ মাত্র ৪জন কর্মরতদের নিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। একটি মাত্র ভ্যাটেনারি সার্জনের পদ খালি। দুইজন কৃত্রিম প্রজনন কর্মীর নেই একজনও। চারজন উপ সহকারী প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার ২টি খালি। নেই অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেট ও ড্রেসার কর্মী।

উপজেলার নদী তীরবর্তী চর কালাই, চর শৌলা, চন্দ্রদ্বীপ, চর ফেডারেশন, চর মমিনপুর, মঠবাড়িয়া ও চরবাসুদেব পাশাসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের উন্মুক্ত চারণভূমিতে লক্ষাধিক গরু মহিষ পালন করা হয়। এসব পশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করেন উপজেলা প্রাণিসম্পাদ দপ্তর। তবে এ দপ্তরে প্রাণি চিকিৎসকসহ গুরুত্বপূর্ণ একাধিক পদ খালি থাকায় ব্যাহত হচ্ছে সেবা। অনেকটা বাধ্য হয়ে স্থানীয় হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছেন গবাদি পশু পালনকারীরা।

জনবল না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাণি সেবা নিতে আসা মানুষেরা সেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পশু হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে স্থানীয় হাতুড়ে পশু চিকিৎসকে দারস্ত হতে হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্চেন গবাদিপশু। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রান্তিক গবাদি পশু পালনকারীরা।

উপজেলার চর কালাইয়া গ্রামের বাসিন্দা মাসুম বিল্লাহ জিয়া(২৮)। পড়াশুনা শেষ করে বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তুলেছেন ছাগলের খাবার। তার খামারে ছাগলের সংখ্যা ৩০টি। বিভিন্ন সময় তার খামারের ছাগল অসুস্থ্য হয়ে পড়লে সরকারি সেবা না পেয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নতুন এ খামারী ।

কথা হয় তার সাথে। জিয়া বলেন, ২বছর ধরে ছাগল পালন করি। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সুবিধা পাইনি । মাঠে তো তারা আসেনই না। পশু হাসপাতালে গেলেও তাদের পাওয়া যায় না। দুই একজনই যারা থাকেন, তারা ব্যস্ত থাকেন অফিসের কাজ নিয়ে।

মো. জহির খান। চর ফেডারেশনে তার মহিষের খামার রয়েছে। চরের উন্মুক্ত চারণভূমিতে মহিষ পালন করা হয়।

জহির খান বলে, ১০বছর ধরে মহিষ পালন করি। খামারে ৭০টি মহিষ রয়েছে। ভাইরাস সহ বিভিন্ন রোগে মহিষ আক্রান্ত হলে সরকারি কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। স্থানীয় চিকিৎসক দিয়েই মহিষের চিকিৎসা করানো হয়। এতে ভুল চিকিৎসায় মহিষ মারাও যায়।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের অলি উল্লাহ ব্যাপারী বলেন, সম্প্রতি স্কীন লাম্পিং ডিজিস রোগে তার ২০টি গরু আক্রান্ত হয়েছে। এ ভাইরাস রোগে তার ৩টি গরু মারাও গেছে। তিনি পশু হাসপাতাল থেকে কোনো সরকারি সেবা বা পরামর্শ পাননি। ওষুধের দোকানদার ও স্থানীয় এক হাতুড়ে পশু চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি গরুর চিকিৎসা দেন।

উপজেলার ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব বলেন,‘ প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে যে ধরণের সরকারি সেবা পাওয়ার কথা তা পাচ্ছি না। যার কারণে বাহির থেকে সেবা নিতে হয়। এতে আমাদের খরচ বেড়ে যায়। ভোগান্তিও পোহাতে হয়।

সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা পার্থ সারথী দত্ত বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে বড় উপজেলা বাউফল। এ উপজেলায় গবাদিপশুর সংখ্যাও বেশি। এত বিশাল সংখ্যার প্রাণির সেবা নিশ্চিত করতে নির্ধারিত লোকের চেয়েও বেশি জনবল দরকার ছিল। দুঃখের বিষয় সেখানে ১১জন লোকের ৭জনই নেই। যার জন্য আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাধ্যমত সেবা দিচ্ছি।

এবিষয় জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডা: সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন,‘ শুধু বাউফল নয়, জেলার অন্য উপজেলা গুলোতেও জনবল সংকট রয়েছে। মন্ত্রণালয়ে একাধিক বার চাহিদা পাঠিয়েছি। জুনের পরে কিছু নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে সংকট কিছুটা কমবে।

Facebook Comments Box


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর