শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়নি শেষ

বর্তমান সংবাদ ডেস্ক : / ২২৯ বার পঠিত
প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩, ৮:১৭ অপরাহ্ণ

আহমদ মাজহারুল হক : ৭৫ সালের আগেও আগস্ট মাস ছিলো, কিন্তু সেই আগস্টের রাতগুলিতে কালো দাগ ছিলো না। ছিলো না কোন কলঙ্ক। ১৯৭৫ সালে এই কাল রাত বয়ে চলবে শতাব্দীর পর শতাব্দী। কারণ জাতির জনকসহ পরিবারের সকলকে সেদিন হত্যা করা হয়। যা কিনা বাঙ্গালি ইতিহাসের কাল রাত। আজও নতুন প্রজন্ম অবাক হয় কি করে পারলো নরখাদক দল এমন হত্যাকান্ড ঘটনাতে। কি অপরাধ ছিলো বঙ্গবন্ধুর ? কি অপরাধ ছিলো শিশু রাসেল এর!? কি অপরাধ ছিলো গর্ভে থাকা সন্তানটির?

­­­১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসায় সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন। সেদিন তিনি ছাড়াও নিহত হন তার স্ত্রী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুলন্নাসা মুজিব।

ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী কামাল; ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসেন কর্নেল জামিলউদ্দীন, তিনিও তখন নিহত হন। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সেদিন এই নরপশুগুলি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন মিলিয়ে ১৬ জনকে এক সাথে হত্যা করে।

স্বাধীনতার পর থেকেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভুট্টো বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা চালাতে থাকেন এবং বাংলাদেশের চরম ডান ও বাম পন্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বঙ্গবন্ধুকে উত্খাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।

আমেরিকান গবেষক ও লেখক স্টেনলি ওলপার্টের মতে, ‘ভুট্টো দুই বছর ধরে আব্দুল হকসহ অন্যান্য মুজিববিরোধী দলকে অর্থ ও অস্ত্র সাহায্য অব্যাহত রাখেন এবং বিনিময়ে ১৯৭৫ সালের আগস্টে ফল লাভ (বঙ্গবন্ধু) করেন।’  দুই বৃহৎ শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাংলাদেশের স্বাধীনতা  সংগ্রামের বিরুদ্ধাচরণ করায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা  বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে তাদের নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন  থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। ইতিহাসের নথি এখন তাই বলছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। ক্ষমতায় বসেন খন্দকার মোস্তাক আহমদ। তার ৮১ দিনের ক্ষমতার প্রহরায় থেকেছেন হত্যাকারীরাই। হত্যাকাণ্ডের পর তিনমাসও অতিক্রম করেনি, ইতোমধ্যে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এক ব্যর্থ অভূথান। নানা ক্ষমতার লড়াইয়ের পর রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। অতঃপর তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সংবিধানভুক্ত করে নেন।

১৯৭৫ সালে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১২ জনকে নানা দূতাবাসে চাকরি পাইয়ে দেন। থমকে যায় ন্যয়! বিচার পাওযার আশা ছিলো কল্পনা! কত যে ইতিহাস পাল্টে দেবার চেষ্টা হযেছে তা আজও মানুষ মনে করে অবাক হয়। কি আজব! জাতির জনকের বিচার নাই! অথচ তিনিই একটি দেশ, একটি বাংলাদেশ।

রাজনীতির পালাবদলে ক্ষমতায় আসেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে। তিনি এসে সেই নেক্কারজনক ইনডেমনিটি বিল সংসদে বাতিল করেন। ফলে জনতার বিজয়ের রচনা শুরু হয় । সত্যি হতে থাকে বঙ্গবন্ধুর বিচার।

২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন। এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসি কার্যকর হয় পাঁচ আসামির।

তারা হলেন- লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও লে. কর্নেল এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার)।

অন্যদিকে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আজিজ পাশা। সবশেষ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে আব্দুল মাজেদের ফাঁসি হয়। ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেফতার হন তিনি। এর পাঁচদিন পর ১২ এপ্রিল কার্যকর হয় তার ফাঁসি। তিনি দীর্ঘদিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন।

এছাড়া বাকি পাঁচ খুনি এখনো পলাতক। নির্মম-নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ৫১ বছর পার হয়ে গেলেও তারা রয়ে গেছেন অধরা। এই পাঁচজনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। আশা রাখি একদিন তাদেরকে এই দেশে এনে ফাঁসি দেওয়া হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Facebook Comments Box


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর