শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:২৬ পূর্বাহ্ন

তিনিই “হাসু আপা” শেখ হাসিনা

বর্তমান সংবাদ ডেস্ক : / ২৬৪ বার পঠিত
প্রকাশের সময় : বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ণ
ফাইল ছবি

 

ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ।।

আহমদ মাজহারুল হক : পূর্ব পাকিস্তানের টুঙ্গিপাড়া যা কিনা বর্তমানে গোপাণগঞ্জর টুঙ্গিপাড়া নামে পরিচিত। সেখানে ১৯৪৭ সালের ২৮ শে সেপ্টেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুনন্নেসার ঘর আলো করে আসেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাঁচ ভাই বোনের মাঝে তিনি সবার বড়। বাসাতে সবাই “হাসু”আপা বলেই ডাকেন তাঁকে। রাজনৈকিত জীবনেও তাকে ” আপা” বলে ডাকেন রাজনৈতিক নেতারা।

সেই টুঙ্গিপাড়াতে বেড়ে উঠতে থাকেন তিনি। ঢাকায় পরিবার সহ চলে আসেন ১৯৫৪ সালে। পরিবারের সকলে মোগলটুলির রজনী বোস লেনের বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। পরে মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে স্থানান্তরিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে থাকা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি আজিমপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন। বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী থাকা অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। এমনকি ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে অংশ নেন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।

১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় ১৯৬৭ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। তাদের সংসারে সজীব ওয়াজেদ জয় (পুত্র) ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (কন্যা) নামে দুই সন্তান রয়েছেন।

ভালোই চলছিলো সংসার জীবন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জন্ম নেয় এক ভয়াবহ কাল রাত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সহ পরিবারের সবাইকে সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয।

তিনি ও বোন শেখ রেহেনা তখন পড়াশোনার কাজে পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান। সেই কাল রাতেই বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে যায়। চলে আসে সামরিক শক্তির আড়ালে গণতন্ত্রের খোলসে আসেন জিয়ার সরকার। এরপর হোসেইন মোহাম্মাদ এর শাসন আমল!

৭৫ থেকে ৮১ অবদি কোনভাবেই দেশের মাটিতে ফিরতে দেয়নি বঙ্গবন্ধু কন্যাদের। এমন কি জিয়া সরকার তখন একটি কমিটি গঠন করেন, যেনো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরতে না পারেন।

এদিকে, বিদেশের মাটিতে বসেও দলের হাল ধরেন তিনি। ১৯৮১ সালে সর্বসম্মতিক্রমে শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দলের সভাপতি নির্বাচিত করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ । ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। আজ সেই ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস।

দেশে আসার পর, নানা রাজনৈতি কর্মকান্ডে তিনি কাজ করেন। দলকে আবার নতুর রুপরেখা দেন। বিরোধী দলীয় নেত্রীর দ্বায়িত্ব পালন করেন ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সাল। পরবর্তীকালে তিনি এবং তার দল এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেন ও ১৯৯০ সালে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করেন।

১৯৯১নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৮৮ টি সংসদীয় আসন লাভ করে এবং প্রধান বিরোধীদল হয়ে সংসদে যান।এরপর ১৯৯৬ সালে তার দল জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং ঐ বছর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বড় ব্যবধানে আবার হেরে যায়।।

২০০৪ সালে ২১ আগস্টে পল্টনে গ্রেনেড হামলার শিকার হন। তখনো আবার পুরো দলকে বিলিন করে দেবার পায়তারা করা হয়। চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা। ফলে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল অবদি কারাবন্দী জীবন যাপন করেন।

২০০৯ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেন। জনগনের আস্থা ও ভালোবাসায়। ২০১৪, ২০১৯ এর জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনা করে আসছেন।

টানা তিনবার নির্বাচিত সরকারে থাকার ফলে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট গুলি তিনি সফলভাবে করতে পেরেছেন। যা কল্পনাও করেনি সাধারণ মানুষ।

সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ফাস্টট্র্যাকভুক্ত মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল ও গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। এখন তার স্বপ্ন “স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। সে লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

১৯৮১ থেকে এখন অবদি তার উপর ১৯ বার হামলা চালানো হয়। তবে ২১ শে আগস্ট গ্রেনেট হামলা ছিলো ভয়াবহ। এখনও দেশী বিদেশী চাপের মুখে পরেই তাকে দেশ চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

এই কান্ডারী শেখ হাসিনা যদি ঐদিন দেশে না ফিরতেন, তাহলে রাজনীতি এখন কোথায় থাকতো? কি হতো দেশের? কোথায় গিয়ে ঠেকতো? সেই প্রশ্ন গুলি এখন ভেবে দেখার সময় হয়েছে। আমরা কি আবার পিছিয়ে যাবো?

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

Facebook Comments Box


এই ক্যাটাগরির আরো খবর
এক ক্লিকে বিভাগের খবর