সাতক্ষীরা : “গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান” এই স্লোগানে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ। সেখানে পরিবেশের ক্ষতি হয় ও ফসলি জমি নষ্ট করে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নে অবৈধ কয়লার কারখানা গড়ে তুলেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। প্রতিদিন শতশত মন কাঠ পুড়িয়ে এখানে তৈরি হচ্ছে কয়লা।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিনিয়ত গাছ রোপন ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর মাধ্যমে দেশব্যাপী কার্যক্রম চলমান থাকলেও অধিক মুনাফার আশায় হেলাতলা ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ফসলি জমিতে কাঠ পুড়িয়ে চলছে কয়লা তৈরীর মহাযজ্ঞ।
স্থানীয় কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, অবৈধ কয়লা তৈরির কারখানার ধোঁয়ার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কমেছে ফলের ফলন। আশেপাশে থাকা আম গাছে ফলন কমেছে। কুলের মুকুল আসলেও মৌমাছি না থাকার কারণে কূলচাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এলাকার শিশু বৃদ্ধ সহ নানা বয়সের মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরণের রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। কারো কথা শুনছে না অবৈ কয়লা কারখানার মালিক। প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে আছে এলাকাবাসী।
একই একাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, কালো ধোঁয়ার কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এলাকাবাসী দূর্ভোগ পোহাচ্ছে কিন্তু অভিযোগ জানানোর জায়গা না থাকায় অনেকটা নিরুপায় এখানকার লোকজন।
কারখানা শ্রমিক আশিক ও কালাম জানান, প্রতি কারখানায় ১০ টি করে চুল্লি রয়েছে। প্রতি চুল্লিতে ৭০ থেকে ৮০ মন কাঠ ৫ থেকে ৬ দিন পুড়িয়ে তৈরি হয় কয়লা। এখান থেকে ২০ থেকে ৩০ মন কয়লা পাওয়া যায়। দিনে প্রায় ১২০০ মন কাঠ লাগে। গাছের অবশিষ্ট কাঠ, যে কাঠ মানুষের খুব একটা কাজে লাগে না। এমন সব কাঠ কয়লার কারখানায় ব্যবহার করা হয়। এখানকার কয়লা দেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানায় চলে যায় বলেও জানান এই শ্রমিকরা।
কারখানা মালিকের ছেলে সজিব খান বলেন, আমাদের কারখানার কারণে কোন প্রকার ক্ষতি হয় না। খুব বেশি ধোঁয়া হয়না। তাছাড়া এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। কোন প্রকার অনুমতি না থাকলেও আইনত অপরাধ হলেও তিনি বলেন, আমরা না করলে এসব কাঠ চলে যাবে দেশের অন্য জেলায়।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, শুধু খারাপটা না খুজে, এখানে যা ভালো আছে সেটাও দেখেন।
ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি অন্য একটি কারখানার মালিক কয়লা ইউনিয়নের শ্রীপতিপুর গ্রামের ‘স’ মিল মালিক সেলিম হোসেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের কাগজ দেখতে চাইলে সাংবাদিকের উপর কিছুটা চড়াও হন তিনি।
কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, প্রশাসন বার বার ভেঙ্গে দিলেও পুনরায় আবার কারখানা চালু হচ্ছে। এবার কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনেকটা অভিযোগের সুরেই উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, এসব অসাধু ব্যবাসায়ী রাষ্ট্রের চেয়ে কি শক্তিশালী। তবে এবার চুল্লির এক টুকরোও রাখা হবে না। জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করে তিনি এই অবৈধ স্থাপনা ভেঙ্গে দিয়ে কলারোয়ার মানুষকে মুক্ত করার দাবী জানান ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসফিকা হোসেন বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার অবগতিতে না থাকলেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি।
জেলা পরিবেশ অধিদরের কর্মকর্তা সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, এই অসাধু ব্যবসায়ীরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাহিরে। অভিযান পরিচালনার সময়ে তাদের পাওয়া যায় না। এজন্য পরবর্তীতে পুনরায় কারখানা গড়ে তোলার সুযোগ পায়। এবার ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।